জ্যোতিষ বচন
জ্যোতিষ-বচন
-------------------------
শোন শোন মন দিয়ে জ্যোতিষ বচন
বারো রাশি আমাদের করে নিয়ন্ত্রণ
মঙ্গল -মেষ বৃশ্চিকের অধিপতি
ধনু ও মীনের অধিপতি বৃহস্পতি ৷
মকর আর কুম্ভ হল শনির স্ব-স্থান
বৃষ,তূলা রাশি দুটো দৈত্যগুরু পান ৷
রবির স্ব-ক্ষেত্র সিংহ তুঙ্গী তিনি মেষে
কর্কট চন্দ্রের গৃহ, শোন হেসে হেসে ৷
প্রত্যেকেরই দুটো ঘর রবি চন্দ্র ছাড়া
রাহুর সপ্তমে কেতু সততই খাড়া ৷৷
রবি তুঙ্গী মেষে তার তূলা নীচস্থান,
শনি তার বিপরীতে সততই যান ৷
মঙ্গল মকরে তুঙ্গী শুক্র তুঙ্গী মীনে,
বৃষে তুঙ্গী হন চন্দ্র রাতে কিম্বা দিনে ৷
কর্কট রাশিতে হন তুঙ্গী বৃহস্পতি,
কন্যায় বুধ তুঙ্গী শোন ভাগ্যবতী ৷
শুভ গ্রহে শুভ ফল সততই মেলে,
গ্রহগণ মাঝেমধ্যে বক্রী হয়ে গেলে-
কোন ক্ষেত্রে ভাল ফল কোন ক্ষেত্রে মন্দ
নানা মুনি এই নিয়ে করে যান দ্বন্দ্ব ৷৷
গ্রহরাও পরস্পর শত্রুমিত্র হয়,
রবি,শনি ,মঙ্গলকে পাপগ্রহ কয়-
চন্দ্র হন শুভ যদি পূর্ণবলী হন,
শুভ সঙ্গে বুধ শুভ অশুভে দুর্জন ৷
গুরু কিম্বা শুক্র কভু পাপগ্রহ নয়,
পাপ হলে হয় সেটা লগ্ন বিপর্যয় ৷
রাহু কেতু এরা হন সততই বক্রী,
রাহুর দৃষ্টি হয় সদাই কুচক্রী ৷
সাতাশটি নক্ষত্র আছে এই বারো ঘরে,
প্রতি ঘরে সোয়া দুই নক্ষত্রকে ধরে ৷
প্রতি নক্ষত্রের আবার চারপাদ হয়,
রাশি প্রতি নক্ষত্রপাদ লাগে নয় ৷
অশ্বিনী ও ভরণীর আট পাদ যোগ,
কৃত্তিকার একপাদ মেষ করে ভোগ ৷
কৃত্তিকার বাকী তিনপাদ বৃষে যায়,
রোহিণীর চারপাদ ই বৃষরাশি পায় ৷
মৃগশিরা ভাগ হয় বৃষে ও মিথুনে
এইভাবে পূ্র্ণতা আসে নাক্ষত্রিক গুণে ৷
গ্রহগণ যে ঘরেই করে বিচরণ
নক্ষত্রের সাথে তার হবেই মিলন ৷
মীনে গিয়ে পূর্ণ হয় নাক্ষত্রিক গতি,
সর্বশেষ নক্ষত্রের নামটি রেবতী ৷
নক্ষত্রের নাম যদি মন দিয়ে শেখো,
বাংলা মাসের নাম এখানেই দেখো ৷
অশ্বিনী কৃত্তিকা থেকে আশ্বিন কার্তিক
মৃগশিরা মার্গশীর্ষ জেনে রেখো ঠিক
পূষ্যা থেকে পৌষ আর মাঘ মঘা থেকে
পূর্ব-উত্তর বাদ দাও ফাল্গুনী কে রেখে
চিত্রা থেকে চৈত্র পাই বিশাখায় বৈশাখ
সবই হলো স্পষ্ট কিছু নেই রাখঢাক
জ্যেষ্ঠা থেকে জ্যৈষ্ঠ হয় সকলেই জান
পূর্বোত্তর আষাঢ়া থেকে আষাঢ়কে টানো
শ্রবণায় শ্রাবণ কি থাকে ছদ্মবেশে?
পূর্বোত্তর ভাদ্রপদে ভাদ্র বলি শেষে।।
বাকি নক্ষত্রের নাম এইবারে বলি
ভরণী ও রোহিনীকে নিয়ে পথ চলি
আর্দ্রা ও পুনর্বসু চলে ঠাটেবাটে
অশ্লেষার পরে হস্তা হস্তি সম হাঁটে
স্বাতী আর অনুরাধা দুই সখি শেষে
মূলা ও ধনিষ্ঠার হাত ধরে এসে
বাকি থাকে শতভিষা ক্ষিপ্র তার গতি
ধীরে ধীরে এইবারে চলেছে রেবতী।।
নামগুলো বলা হলো ওলোট পালোট
ঠিক করে পড়ে নিলে খুলে যাবে জট
রাশি আর নক্ষত্রই ছকে মূলধন
লগ্ন অনুযায়ী ফল দেয় গ্রহগণ।।
তিনশ ষাট অংশ পাই মোট বারো ঘরে
অতএব প্রতি রাশি ত্রিশ অংশ ধরে ৷
এ থেকে নবাংশ চক্র হয় নিরূপণ,
প্রতি নবাংশের অধিপতি একজন ৷
কে কার নবাংশে আছে জানা যায় তবে,
প্রতি অংশ ডিগ্রী ধরে নিরূপিত হবে ৷।
নবতারা চক্র বার করা খুব সোজা,
প্রথম কাজটি জন্ম নক্ষত্রকে খোঁজা
প্রথমে বসিয়ে জন্ম নক্ষত্র নম্বর,
নয়টি নক্ষত্র ক্রমে লেখো পরপর-
দশম জন্মের ঠিক নীচে চলে যাবে,
আগের নিয়মে পুণঃ নক্ষত্র বসাবে ৷
এক ঘরে ন"টি হলে পূর্ণ তিন ঘরে,
নবতারা চক্র এভাবেই বার করে ৷
সর্বোপরি লেখো জন্ম,সম্পদ,বিপদ,
ক্রমে ক্ষেম,প্রত্যরি, সাধক আর বধ ৷
তারপরে মিত্র আর অতিমিত্র লেখো,
এভাবেই "নবতারা চক্র" হলো দেখো ৷
তিনটি অশুভ এই নবতারা মাঝে,
বিপদ, প্রত্যরি, বধ কার্যকালে বাজে ৷
দশা অন্তর্দশা কালে বাকী পাঁচ তারা-
অধিপতি শুভ করে অশুভকে তাড়া ৷
ত্রিপাপ চক্রে তিন চক্র আঁকা থাকে,
প্রথমে ,কেতুপতাকী চক্র বলে তাকে ৷
ক্রমে কেতুকুণ্ডলী আর গুরুকুণ্ডলী,
তিন চক্র মিলে ত্রিপাপ চক্র হয় বলি ৷
ভিন্ন ভিন্ন চক্র আঁকা হয় নক্ষত্র প্রতি,
তিন গ্রহ ক্রমে হয় বর্ষ অধিপতি ৷
একই বর্ষে তিন পাপগ্রহ যদি থাকে,
জ্যোতিষ বিচারে সেই পড়বে বিপাকে ৷
তিন গ্রহ শুভ হলে ভাল ফল দেবে,
ত্রিপাপ চক্র দেখে সব জেনে নেবে ৷
ষন্নাড়ী চক্রে ছটি নক্ষত্র সাজাও,
এইভাবে জন্মকে এক ধরে যাও ৷
জন্ম নক্ষত্র এক, হবে " জন্মনাড়ী"
দশমটি "কর্মনাড়ী", তারপর পাড়ি-
দাও ষোলো নম্বরে, বলে সাংঘাতিক,
নক্ষত্র গণনা যেন হয় ঠিক ঠিক-
এরপর সোজা অষ্টাদশে যাও চলে,
বিজ্ঞজনে একে সমুদয় নাড়ি বলে,
ত্রয়োবিংশ নক্ষত্রটি হয় যে বিনাশ,
এতে পাপগ্রহ থাকলে হয় সর্বনাশ ৷
পঞ্চবিংশ নক্ষত্র "মানস" বলি তাকে,
সকল ক্ষেত্রেই যদি পাপগ্রহ থাকে-
অশুভত্ব ডেকে আনে নানা মুনি বলে,
গ্রহগণ এইভাবে কর্ম করে চলে ৷
এবার যেকোন ছক নিয়ে বসে পড়
যেখানে লগ্ন লেখা তাকে এক ধর ৷
লগ্নই প্রথম স্থান, তনুস্থান বলে,
এর অধিপতি তার কর্ম করে চলে ৷
লগ্ন অধিপতি যদি বলশূন্য হয়,
জাতকের পদে পদে আনে বিপর্যয় ৷
এ থেকে বিচার হয় শরীরের ভাব,
বর্ণ,যোগ্যতা,যশ,মস্তকও স্বভাব ৷
দ্বিতীয় স্থানকে ধনস্থান বলা হয়,
সঞ্চয়,কুটুম্ব, খাদ্য,ক্রয়-বিক্রয়,
বাক্য,চক্ষু,মুখ,গলা-বিচারের স্থান,
এর অধিপতি ধনপতি আখ্যা পান ৷
তৃতীয় স্থানকে বলে সহোদর স্থান,
তৃতীয়াধিপতি যদি হয় বলীয়ান,
ভাই-বোন,দাসদাসী, উত্তম ভূষণ,
জাতককে সততই করে আলিঙ্গন ৷
চতুর্থ স্থানকে কেন্দ্রস্থান বলা হয়,
এর থেকে বন্ধু,মাতা,গৃহ,সমুদয়-
সুখ,বক্ষ,পিতৃবিত্ত,রক্ত-সঞ্চালন
বিচার্য্য, শুভ হলে সুখী সেই জন ৷
প্রতিভা প্রকাশ হয় পঞ্চম থেকে,
সন্তান স্থান বলে জেনে রেখো একে ৷
ভক্তি,বুদ্ধি,মতিগতি,বিদ্যা,প্রণয়,
পঞ্চম থেকেই হয় সবার উদয় ৷।
পঞ্চম নবম স্থান কোণ বলে খ্যাত
যার দুই শুভ সে হবেই বিখ্যাত
ষষ্ঠ থেকে জানা যায় রোগ, শত্রু, জ্ঞাতি
এই স্থান শত্রু স্থান বলে পায় খ্যাতি
সপ্তম আরেক কেন্দ্র, জায়া স্থান বলে
এ থেকে দাম্পত্য সুখ মেলায় সকলে
অংশীদারি ব্যবসা ও গমনাগমন
জানা যায় এখানেই শোন সর্বজন
অষ্টম স্থানকে আয়ুস্থান বলা হয়
শোক, অপবাদ, মৃত্যু জয়, পরাজয়
মানসিক কষ্ট, মৃত্যুর কারণ ও ধর্ম
খুঁজে পেতে বার করা এ স্থানের কর্ম।।
নবম স্থানকে ভাগ্য স্থান বলে জানি
এখানে ঘোরায় ভাগ্য তার চাকাখানি
ধর্ম, গুরু, ভাগ্যোন্নতি, পিতার বিষয়
সমস্ত বিচার এই স্থান থেকে হয়
কর্ম বিচার হয় দশমের ঘরে
দশম স্থানকে তাই কর্মস্থান ধরে
মান, পদ, মর্যাদা, জীবিকা ও যশ
সবই পাবে ওই ঘরে- লগ্ন থেকে দশ
আয়ের বিচার হয় একাদশ ঘরে
শুভ যদি আয়পতি সুবিচার করে
অর্থোপার্জন, সিদ্ধি, কন্যা, জামাতা
পুত্রবধূ, বাহনাদি, আর জ্যেষ্ঠভ্রাতা
এসব বিচার হয় একাদশ স্থানে
সকল গ্রহ এঘরে শুভফল আনে
যদিনা দ্বাদশ পতি থাকে আয় ঘরে
কারণ দ্বাদশ ঘর ব্যয় নির্দেশ করে।
জাতকের সচ্ছলতা, ব্যয় ও ভ্রমণ
ক্ষয়ক্ষতি, রাজদণ্ড, সৌখ্য, শয়ন
দানবৃত্তি এমনকি পদজোড়া শেষে
বিচার করতে হয় দ্বাদশেতে এসে
এভাবেই বারো ঘর কাজ করে চলে
শুভ কর্মে শুভ ফল সকলেই বলে।।
নক্ষত্রকে গুণে দশা হয় নিরূপিত
বিংশোত্তরী দশা সমধিক প্রচলিত
জন্ম সময়ে চন্দ্র যে নক্ষত্রে থাকে
দশা বিচারের ক্ষেত্রে নিতে হবে তাকে
নক্ষত্র যদি হয় তিন, একুশ, বারো
রবির দশায় জন্ম বলে দিতে পারো
যদি হয় নক্ষত্র ষোলো, বাইশ,চার
চন্দ্রের দশায় অবশ্যই জন্ম তার
পাঁচ, চোদ্দ, তেইশ হলে মঙ্গলের দশা
চব্বিশ, পনেরো, ছয়ে রাহু থাকে বসা
সাত, ষোলো, পঁচিশে হবেই বৃহস্পতি
ছাব্বিশ, সতেরো, আটে শনি দশাপতি
যদি হয় সাতাশ, আঠারো কিম্বা নয়
অবশ্য বুধের দশায় জন্ম তার হয়
দশ, উনিশ, এক হলে অবশ্যই কেতু
এভাবেই তৈরি হয় নাক্ষত্রিক সেতু
যদি হয় দুই, কুড়ি, এগারো নম্বর
শুক্রের দশায় জন্ম নেই তারপর
রবি, চন্দ্র, মঙ্গল ও রাহু, বৃহস্পতি
শনি, বুধ, কেতু, শুক্র নব দশাপতি
শুভ হলে দশাকালে সর্বকার্ষে জয়
অন্তর্দ্দশা, দশা থেকে নিরূপিত হয়
মহাদশা, অন্তর্দ্দশা, প্রত্যন্তর্দ্দশা
কালচক্র এভাবে করায় ওঠাবসা
এজন্যই সুখ দুঃখ ঘোরে চক্রাকারে
কে কখন মরে আর কে কখন মারে
সবকিছু নবগ্রহ করে নিরূপণ
যে বলে আমিই বড়- মূর্খ সেইজন।।
#####
এবার একটু আমি আত্মকথা বলি
ছোট থেকে আমি সে আদর্শ মেনে চলি
সৎ ভাবে থাকাটাই বড় সবচেয়ে
আসলে সে যাই হোক ছেলে কিম্বা মেয়ে
কারোর জন্মের জন্য কেউ দায়ী নয়
কর্মই বিচার করে জয়-পরাজয়
আত্মসংযম আর কর্ম চেষ্টা বলে
অশুভ গ্রহের ছায়া যাবে অস্তাচলে
এ আশায় বুক বেঁধে কাজ করে গেলে
অবশ্যই একদিন শুভ ফল মেলে
জ্যোতিষ শাস্ত্র অতি বিশাল বিষয়
আমার জ্ঞানের সীমা এর বেশি নয়
সঠিক সময় জেনে লগ্ন-নিরূপণ
ছক তৈরি করা যায় যখন তখন
তার জন্য দরকার কিছু পড়াশোনা
রাশি আর নক্ষত্র ঠিকঠাক গোণা
ছক তৈরি করে দশা অন্তর্দশা লেখো
আমি চাই তোমরাও এভাবেই শেখো
মিডিয়াকে ঘিরে আজ এত হইচই
জ্যোতিষকে নিয়ে, আমি দার্শনিক নই
তবুও বলতে চাই ক্ষমা করো যদি...
ভুল কিছু বলে থাকি আমি এ অবধি
কিছুই না জেনে শুধু উদ্ভ্রান্ত হয়ে
আজকাল অনেকেই ঘোরে ভাগ্য জয়ে
জ্যোতিষীর দরবারে- তাদের উদ্দেশে
একটা কথাই আমি বলি সবশেষে
জ্যোতিষ শাস্ত্র অতি প্রাচীন বিষয়
একে নিয়ে ছেলেখেলা করা ঠিক নয়
পূর্ণ বিশ্বাস যদি থাকে এ বিষয়ে
কিছু কিছু বই পড় একনিষ্ঠ হয়ে
কিছুটা ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন
তাদের জন্য এই ক্ষুদ্র আয়োজন
বিজ্ঞান ও আধ্যাত্ম্যবাদ মিলবে যখন
আমার প্রচেষ্টা হবে সার্থক তখন
আজ তবে এটুকুই থাক, আর নয়
সত্যই সার, হবে সত্যেরই জয়।।
~~~~~~~~~~~ ~~~~~~~~~~
কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী চক্রবর্তী
(২০০৪)
Comments
Post a Comment